• ঢাকা, বাংলাদেশ মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:১৫ অপরাহ্ন
  • [কনভাটার]
শিরোনামঃ
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সাথে সাইদুর রহমান বাচ্চুর মধ্যাহ্নভোজ। সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন চালুর দাবীতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান। ৭ দিনের মধ্যে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন চালু না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা। সিরাজগঞ্জে সিএনজি-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৫। সবজির বস্তায় মাদক বহন কালে দুই মাদক কারবারি গ্রেফতার। যমুনা সেতুতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষ, নিহত তিন। সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে শহীদি মার্চ অনুষ্ঠিত। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থেকে ৯৯০ পিস বুপ্রেনরফিন ইনজেকশনসহ ২ নারী মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার। সিরাজগঞ্জে পৃথক তিন মামলায় সাবেক এমপি-সচিবসহ ৪৬৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা, অজ্ঞাত ৪৫০। সিরাজগঞ্জে ৮১ কেজি গাঁজাসহ তিন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার।

বাড়ি-ভিটা আর রেশনের কাছে বন্দী চা–শ্রমিক

Reporter Name / ৫৭ Time View
Update : শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মজুরি নির্ধারণেরও পদ্ধতি আছে। একজন শ্রমিককে এমনভাবে মজুরি দেওয়া হয়, যাতে একজন শ্রমিক সেই মজুরি দিয়ে নিজে ও তাঁর পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে পারেন, বাসাভাড়া দিতে পারেন, সন্তানকে আগামী দিনের মজুর হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা দিতে পারেন আর সপ্তাহে এক দিন সপরিবার বিনোদন মানে সিনেমা-থিয়েটার উপভোগ করতে পারেন।

কুড়িগ্রামের দাসের হাটে একটা স্পিনিং মিল ছিল। ১২ বছর আগে এই স্পিনিং মিলে একজন শ্রমিক সর্বোচ্চ মজুরি পেতেন ২ হাজার ৯০০ টাকা। তখন ঢাকায় একই গ্রেডের একজন শ্রমিক ১৬ হাজার টাকা। কেন এমনটা হতো?

পাকিস্তান হলো, জমিদারি গেল; সবাই জমি পেলেন, রায়তরা কৃষক হলেন, বাগানের শ্রমিকেরা ভূমিদাসই রয়ে গেলেন। যে জমিতে দুই শ বছর ধরে বাস, না হলে সেই জমির ভাড়া এখনো বাগানের মালিকেরা মজুরি থেকে কেটে নিচ্ছেন কীভাবে?

এ বিষয়ের উত্তর মিলবে ফ্রিডরিখ অ্যাঙ্গেলসের–এর ‘বাস্তু সংস্থান প্রসঙ্গে’ প্রবন্ধের একটি উদাহরণের মধ্যে। ইংল্যান্ডের শ্রমিক কলোনিগুলোতে প্রত্যেক শ্রমিকের বাড়ির সামনে এক চিলতে জমি থাকত। শ্রমিক ও তাঁর পরিবার ওই জমিটুকুতে পরিবারের প্রয়োজনীয় সবজি উৎপাদন করত। এই পরিশ্রমটুকু তাঁরা করতেন বিনোদনের সময় বাঁচিয়ে। অ্যাঙ্গেলস বলেছেন, এই যে তাঁরা সবজি উৎপাদন করছেন, এগুলো কিনতে পাউন্ড খরচ হতো, সেটুকু তো কারখানামালিককে দিতে হতো উৎপাদন না হলে। আর ওই যে বাসস্থানের বদলে শ্রমিকদের স্বাধীনতাটুকুও কেড়ে নেওয়া গেল। বাড়ির মধ্যে আটকে ফেলা গেল।

অর্থাৎ, কুড়িগ্রাম স্পিনিং মিলের শ্রমিকেরা নিজ বাড়িতে থাকলেও তার ভাড়া ও উৎপাদিত সবজির মূল্য স্পিনিং মিলের মালিকই ভোগ করেন। ঢাকায় থাকলে এই বাসাভাড়া ও সবজির দাম মজুরি হিসেবে মালিককে দিতে হতো। অর্থাৎ, শ্রমিক যখন কারখানায় কাজ করেন, তখন তিনি বাসস্থানের মালিকানাও হারান। অর্থাৎ, নিজের বাড়িতে তিনি নিজেই ভাড়া থাকেন।
ফটিকছড়ি বা পঞ্চগড়ের শ্রমিকদের বাড়িও শ্রমিকদের নয়। তবু তাঁরা মজুরি পান ৫০০ টাকা। কিন্তু সিলেট বিভাগের চা–শ্রমিকদের বেলায় তা হচ্ছে না কেন? চা–শ্রমিকেরা বাড়ির ভাড়া একটু বেশিই গুনছেন। রেশনের বেলায়ও তা–ই। বাড়ি–ভিটা আর রেশনের দামে চা–শ্রমিকদের স্বাধীনতা কিনে নেওয়া হয়েছে, তার সমাধানই জরুরি।

২.

১৮ দিন কর্মবিরতি হলো। তার বিনিময়ে পাওয়া গেল ১২০ থেকে ১৭০ টাকা মজুরি। হিসাব ধরা হলো, বাসাভাড়া-সবজি উৎপাদনের একফালি জমি আর রেশন। দুই শ বছর ধরে একই জায়গায় বসবাস করেও বাড়ি–ভিটার মালিক চা-শ্রমিকেরা নন। সিলেট-মৌলভীবাজারের টি স্টেটগুলো তবে বাংলাদেশের বাইরে। এখনো আইন রয়েছে, ৬০ বছর ধরে সরকারি জমিতে বাস করলে সেই জমির মালিক হবেন বসবাসকারী। তবে?
১৯১৫ সালে বাংলা পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল এফ সি ডালি একটি বই লেখেন। বইটির নাম ‘বাঙ্গালাদেশে যে সকল দুর্ব্বৃত্ত জাতি চুরি ডাকাইতি প্রভৃতি করে তাহাদের সম্বন্ধে পুস্তক’। সেখানে তিনি লিখেছেন, বাংলার অধিবাসী এবং অন্য প্রদেশ থেকে আসা লোকদের মধ্যে যারা চুরি-ডাকাতি করে, তাদের কার্যপ্রণালি সম্পর্কে পুলিশের কর্মচারীদের শিক্ষা দেওয়াই এই বই লেখার উদ্দেশ্য। উল্লেখ্য, চা–শ্রমিকদেরও সেই দুর্বৃত্ত জাতির অন্তর্ভুক্ত করেছিল ব্রিটিশরাজ। জমির মালিক না হওয়ায় কয়েকজন তরুণ অতীতে পুলিশের চাকরি করতে পারেননি। পুলিশে নিয়োগ পাওয়া আসপিয়ার ঘটনা যখন সামনে এল, তখন বিষয়টা আমরা জানতে পারি।

ফটিকছড়ি-পঞ্চগড়ের চা–শ্রমিকদের তুলনায় অর্ধেকের চেয়েও কম সিলেটে। দেশের চা–বাগানগুলোতেই মজুরির এই বৈষম্য কেন হবে? এ তো নয়, একেক বাগানের মালিকের ব্যবসার ক্ষেত্র আলাদা। একই মার্কেটেই তো তাঁদের ব্যবসা, মুনাফাও একইভাবে করেন। তাহলে?

কুলিকা বাচ্চা/কভি নাহি আচ্ছা। পুরুষ শ্রমিকদের বলা হতো মর্দনা আর নারীদের রেন্ডি বলা হতো। এর চেয়ে ভালো শব্দ তাদের জন্য বরাদ্দ নয়। এখানকার আদি বাগানমালিকেরা ওয়েস্ট ইন্ডিজে দাস মালিক ছিলেন। চা–শ্রমিকেরা তাঁদের কাছে ভূমিদাসই ছিলেন। ১৮৬০ সালের নীল কমিশনের প্রতিবেদনেও তাঁদের অত্যাচারের প্রমাণ আছে। পাকিস্তান হলো, জমিদারি গেল; সবাই জমি পেলেন, রায়তরা কৃষক হলেন, বাগানের শ্রমিকেরা ভূমিদাসই রয়ে গেলেন। যে জমিতে দুই শ বছর ধরে বাস, না হলে সেই জমির ভাড়া এখনো বাগানের মালিকেরা মজুরি থেকে কেটে নিচ্ছেন কীভাবে?

সারা দেশে কয়েক লাখ ভূমিহীনকে জমিসহ ঘর তুলে দেওয়া হলো। সামাজিক নিরাপত্তার যে অধিকার দেশের অন্য নাগরিকেরা ভোগ করেন, চা–বাগানের শ্রমিকেরা তার বাইরে রইলেন কেন? নাকি তাঁরা বে–নাগরিক? দুইবার দেশবদল হলো, বদল হলেন বাগানমালিকও। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে প্রতিরোধও গড়ে তুললেন চা–বাগানের শ্রমিকেরা। জমিদারি গেল, সবাই জমি পেল; তবু রয়ে গেল টি স্টেট, আর ভূমিদাস চা-শ্রমিকেরা।

  • নাহিদ হাসান লেখক ও সংগঠক।
    nahidknowledge@gmail.com


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category