মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অনন্য গুণ হলো সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্ততা। এ কারণে কাফির, মুশরিকরাও তাঁকে ‘আল আমিন’ বা ‘বিশ্বাসী’ বলে ডাকত। আমানতদারি বা বিশ্বস্ততা মানুষের অনুপম বৈশিষ্ট্য। আমানতদার ব্যক্তি সব সমাজেই প্রশংসিত। আল্লাহ তাআলা প্রকৃত মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন, ‘তারা (মুমিনরা) সেসব লোক, যারা আমানতের প্রতি লক্ষ রাখে এবং স্বীয় অঙ্গীকার হেফাজত করে।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৮) ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, আমানতসমূহ তার প্রকৃত পাওনাদারদের নিকট প্রত্যর্পণ করতে।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৫৮)
আমানতদারি একটি ব্যাপক বিষয়। সৃষ্টির সূচনায় আল্লাহ তাআলা তাঁর আমানত সোপর্দ করার জন্য আসমান, জমিন, পাহাড় ও মানুষের কাছে প্রস্তাব করেছিলেন। ‘আমরা আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার নিকট এই আমানত পেশ করেছিলাম। অতঃপর তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং শঙ্কিত হলো, কিন্তু মানুষ তা বহন করল। বস্তুত সে অতিশয় জালিম ও অজ্ঞ।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, আয়াত: ৭২)
এই আমানতের বিস্তৃতি জীবনের সর্বক্ষেত্রে। ব্যক্তিগত জীবনে একনিষ্ঠতার সঙ্গে ইবাদত করা তথা আল্লাহর আদেশ পালন করা ও নিষেধ থেকে বিরত থাকা, হালাল-হারাম মেনে চলা, লেনদেনে, চালচলনে, কাজেকর্মে আল্লাহর বিধিবিধান মেনে চলা—সবই আমানতদারির বিভিন্ন অংশ। ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও আমানতদারি রক্ষা করা জরুরি। আমানতদারি রক্ষা না করা মুনাফিকের নিদর্শন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুনাফিকের নিদর্শন তিনটি—মিথ্যা কথা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে, আমানত খিয়ানত করে। (বুখারি: ৩২)
প্রিয় নবীজি (সা.) আরও বলেন, ‘যার মধ্যে এই চার স্বভাব রয়েছে, সে খাঁটি মুনাফিক; আর এর যেকোনো একটি যার মধ্যে রয়েছে, তার মধ্যে মুনাফিকের লক্ষণ বিদ্যমান, যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে। ১. আমানত খিয়ানত করে, ২. মিথ্যা বলে, ৩. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ও ৪. বিবাদে অশ্লীল কথা বলে। (বুখারি: ৩৩)
আমানত ব্যাপক অর্থবোধক একটি বিষয়। এর প্রধান অনুষঙ্গ তিনটি—জীবন, সম্পদ ও সম্মান। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক আমানত, কথার আমানত, গোপনীয়তা রক্ষার আমানত, সম্ভ্রমের আমানত, দায়িত্বের আমানত, ইলমের আমানত, ইসলামি দাওয়াতের আমানত, দ্বীন প্রতিষ্ঠার আমানত, রাষ্ট্রীয় আমানত, আদালতের মাধ্যমে আল্লাহর ন্যায়বিধান বাস্তবায়নের আমানত, নেতৃত্ব ও পদমর্যাদার আমানত, ন্যায়বিচারের আমানত, জনগণের আমানত, সংগঠনের আমানত, প্রতিষ্ঠানের আমানত, চাকরির আমানত, ব্যবসায়ের আমানত, স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের আমানত, পরিবার প্রতিপালনের আমানত ইত্যাদি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি তার আমানত আদায় করো, যে তোমার নিকট আমানত রেখেছে। আর তোমার সঙ্গে যে খিয়ানত করেছে, তার সঙ্গে খিয়ানত করো না।’ (আবুদাউদ: ৩৫৩৫; তিরমিজি: ১২৬৪) আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা অঙ্গীকার পূর্ণ করো, নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে (কিয়ামতের দিন) তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৪)