অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো স্বাগতিকদের হারালো জিম্বাবুয়ে! রায়ান বার্লের স্পিন বিষে নীল অস্ট্রেলিয়াকে ১৪১ রানে বেঁধে জয়ের সম্ভাবনা আগেই তৈরি হয়েছিল তাদের। স্বাগতিকদের আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে সফরকারী ব্যাটাররা কিছুটা পরাস্ত হলেও শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে জিম্বাবুয়ে। ৬৬ বল হাতে রেখে পাওয়া ৩ উইকেটের এ জয়ের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস গড়লো জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজে হারানোটা যে মোটেও ‘আকস্মিক’ কিছু ছিল না, অস্ট্রেলিয়াকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে সেটিই যেন প্রমাণ করল জিম্বাবুইয়ানরা।
শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) টাউন্সভিলের রিভারওয়ে স্টেডিয়ামে টসে জিতে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠান জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক রেজিস চাকাভা।
শুরুটা ভালই হচ্ছিলো অজিদের। কিন্তু ৫ম ওভারে এনগারাভার ২য় বলে বার্লের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। ফিঞ্চের পর নামা স্টিভেন স্মিথ সুবিধা করতে পারেননি মোটেও। ৬ষ্ঠ ওভারের ৪র্থ বলে নাইয়ুচির বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন ৬ বলে ১ রান করা স্মিথ। মাঠে নামেন অ্যালেক্স ক্যারি।
অপর প্রান্ত ধরেই খেলছিলেন অভিজ্ঞ ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার, যদিও ইনিংস জুড়ে দেখেছেন শুধু সতীর্থদের আসা-যাওয়া।
৯ম ওভারের শেষ বলে চাকাভার হাতে ক্যাচ দিয়ে ব্র্যাড ইভান্সের ১ম শিকারে পরিণত হন ৯ বলে ৪ রান করা ক্যারি। এরপর ব্র্যাডের বলে আবারও চাকাভার হাতে ধরা পড়েন ৩ রান করা মার্কাস স্টইনিসও। এরপর, ৩ রান করা ক্যামেরন গ্রিনকে ফেরান শন উইলিয়ামস। ততক্ষণে চোখে অন্ধকার দেখা শুরু হয়েছে অজিদের। এমন আক্রমণ তো সচরাচর কেউ করে না তাদের!
কিছুটা হাল ধরার চেষ্টা করেছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। কিন্তু ২২ বলে ১৯ রান করা ম্যাক্সওয়েলকেই নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেন রায়ান বার্ল। সবে তো শুরু! এরপর বার্ল একে একে অ্যাশটন অ্যাগার, জশ হ্যাজলউড, মিচেল স্টার্ক ও সেই ওপেনিংয়ে নেমে ৯৪ রান করা ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করে ১৪১ রানে গুটিয়ে দেন স্বাগতিকদের ইনিংস।
ওয়ানডেতে ১৪২ রান লক্ষ্য হিসেবে খুব একটা বড় না। শুরুটাও খুব খারাপ হয়নি সফরকারী জিম্বাবুইয়ানদের। উদ্বোধনী জুটিতে ৩৮ রান পায় দলটি। সফরকারীদের প্রথম আঘাতটি করেন হ্যাজলউড, দলীয় ৩৮ রানে ওপেনার কাইতানো ফেরেন সাজঘরে। সুবিধে করতে পারেননি ওয়ানডাউনে নামা ওয়েসলি মাধেভরেও। ৭ বল খেলে ২ রান করা মাধেভরেও পরিণত হন হ্যাজলউডের শিকারে। ব্যাট করতে নেমেই শূণ্য রানে হ্যাজলউডের বলে ক্যারির হাতে ক্যাচ দিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন শন উইলিয়ামসও। অভিজ্ঞ সিকান্দার রাজাও দিতে পারেননি ভরসা, মাত্র ৮ রান করে তিনিও ধরেন সাজঘরের পথ।
দলকে জয়ের পথ দেখাতে মাঠে নামেন অধিনায়ক রেজিস চাকাভা, কিন্তু নেমেই দেখলেন এতোক্ষণ শক্ত হাতে দলের হাল ধরা ৩৫ রান করা মারুমানি পরিণত হলেন ক্যামেরন গ্রিনের শিকারে। এরপর, টনি মুনিয়োঙ্গাকে নিয়ে জয়ের পথেই এগোচ্ছিলেন চাকাভা। অ্যাশটন অ্যাগারের বলে মুনিয়োঙ্গা বোল্ড হলে ব্যাট হাতে নামেন রায়ান বার্ল। একটি ছয় ও একটি চারে স্কোরকার্ডে যোগ করেন ১১ রান। তিনিও আউট হয়ে গেলে ব্র্যাড ইভান্সকে সাথে নিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর ফেলার কাজটি সারেন অধিনায়ক চাকাভা।
প্রসঙ্গত, এর আগে মাত্র দুই বার অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। অজিদের বিরুদ্ধে তাদের প্রথম জয় এসেছিল ১৯৮৩ সালে, আর দ্বিতীয় জয়টি আসে ২০১৪ সালে। তবে এ দুই জয়ের একটিও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পায়নি তারা। প্রথমটি ছিল নিরপেক্ষ ভেন্যু নটিংহ্যামে বিশ্বকাপের ম্যাচে। দ্বিতীয় জয়টি তারা পেয়েছিল এক দ্বিপাক্ষিক সিরিজে নিজেদের মাটিতেই। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে এই প্রথমবারের মতো হারাল জিম্বাবুয়ে।