হিজরি সন ইসলাম ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর কৃষ্টি–কালচার তাহজিব তামাদ্দুন ও ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। মুসলিম জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অপরিসীম। মুসলিম জাতির ধর্মীয় আচার–অনুষ্ঠান, আনন্দ–উৎসবসহ বিভিন্ন বিধিবিধান হিজরি সন তথা আরবি তারিখ ও চান্দ্রমাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ইসলামি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইতিহাসে এই মাস বহু উল্লেখযোগ্য স্মৃতিবিজড়িত। সেসব স্মৃতির সম্মানার্থেই এ মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলা হয়। পবিত্র কোরআনে রয়েছে, ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা ১২, এর মধ্যে ৪টি মাস সম্মানিত।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ৩৬) হাদিস শরিফে চান্দ্রবর্ষের ১২ মাসের মধ্যে মহররমকে ‘শাহরুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
পরিভাষায় মহররমের দশম তারিখকে আশুরা বলে। ‘আশুরা’ আরবি শব্দ, এর অর্থ দশম তারিখ। সৃষ্টির শুরু থেকে মহররমের ১০ তারিখে তথা আশুরার দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এর ফলে আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ ৬২ হিজরি সনে কুফার ফোরাত নদীর তীরে কারবালার প্রান্তরে নবীর দৌহিত্র হজরত হুসাইন (রা.)–এর শাহাদত এদিনকে বিশ্ববাসীর কাছে চিরস্মরণীয় ও অমর করে রেখেছে।
আশুরাতেই নভোমণ্ডলের সৃষ্টিকুলের প্রাথমিক বিভাজনপ্রক্রিয়া সূচনা হয়। হজরত আদম (আ.)–এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও অবনমন—সব ঘটনাই ঘটেছিল আশুরায়। হজরত নুহ (আ.)–এর নৌযানের যাত্রারম্ভ ও বন্যার সমাপ্তিও আশুরাকেন্দ্রিক ছিল। হজরত মুসা (আ.)–এর সমুদ্র অতিক্রমও আশুরা দিবসে হয়েছিল। আশুরা এলে হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিনম্র থাকতেন এবং রোজা রাখতেন। (তাফসিরে তাবারি)
সব নবীর আমলেই আশুরার রোজা ছিল। প্রিয় নবী (সা.) মক্কায় থাকতেও আশুরার রোজা পালন করতেন। হিজরতের পর মদিনায় এসে রাসুলুল্লাহ (সা.) দেখতে পেলেন, ইহুদিরাও এই দিনে রোজা রাখে। নবীজি (সা.) তাদের রোজার কারণ জানতে পারলেন—এদিন হজরত মুসা (আ.) সিনাই পাহাড়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাওরাত লাভ করেন। এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের কবল থেকে উদ্ধার করেন এবং এদিনেই তিনি বনি ইসরাইলদের নিয়ে লোহিত সাগর অতিক্রম করেন। আর সেই সাগরে ফেরাউনের সলিলসমাধি হয়। তাই ইহুদিরা এদিন রোজা রাখে। মহানবী (সা.) বলেন, মুসা (আ.)–এর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক তোমাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ও অগ্রাধিকারমূলক। অতঃপর তিনি ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ মহররম মিলিয়ে দুটি রোজা রাখতে বললেন। হিজরি দ্বিতীয় সনে রমজান মাসের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তবে রমজানের রোজার পর আশুরার রোজা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের নফল রোজা ও অন্যান্য ইবাদত রমজান মাস ব্যতীত অন্য যেকোনো মাস অপেক্ষা অধিক উত্তম। (মুসলিম ও আবুদাউদ)