আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জীবনের বিনিময়ে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমনের যে লড়াই জারি রেখেছেন, তাতে জনজীবনে নিরাপত্তা এসেছে। আশা করি, এবার সরকার শিল্প-সংস্কৃতি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে ভূমিকা নেবে। কারণ, এটাই অসাম্প্রদায়িক-মানবতাবাদী বাংলাদেশ নির্মাণের পথ।
আমার যুক্তি ছিল:
১. শনিবার বিকেল চলচ্চিত্রে কোথাও হোলি আর্টিজান নাম উচ্চারিত হয়নি।
২. হত্যার দৃশ্যগুলো খুব সংযত বা শিল্পসম্মতভাবে দেখানো হয়েছে, যাতে দর্শক অস্বস্তি বোধ না করে। তবে অন্যায় মৃত্যুর বেদনা যেন দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করে, দলিত–মথিত করে, দর্শক যেন হত্যাকে প্রত্যাখ্যান করে, হত্যাকারীদের ঘৃণা করে—এ চলচ্চিত্র দর্শনে তা-ই মনে হবে। আমি নিশ্চিত, ছবিটি মুক্তি পেলে দর্শক জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ নিয়ে ভাববে।
৩. বর্তমান সরকার জঙ্গি দমনে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। এখনো ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী তথাকথিত গোষ্ঠী ধর্মীয় রাষ্ট্র কায়েমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে তরুণদের উদ্বুদ্ধ করার কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। এ অবস্থায় বাংলার লোকায়ত ইসলাম ও জঙ্গিবাদ যে আলাদা, তা চিহ্নিত করা জরুরি।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত শনিবার বিকেল লোকায়ত ইসলাম ও জঙ্গিবাদ যে পরস্পর বিরোধী, তা শৈল্পিকভাবে ছবিতে উপস্থাপন করেছে। আপিলে উত্থাপিত উপরিউক্ত যুক্তির ভিত্তিতে আমি শনিবার বিকেল চলচ্চিত্রের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। আমার কোনো যুক্তি বিরোধী পক্ষ খণ্ডাতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান তৎকালীন ক্যাবিনেট সচিব বলেন, ‘আপনার বক্তব্যে যুক্তি রয়েছে, কিন্তু আমাদের পক্ষে এ ছবির ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এ ছবি রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।’
তারপর দীর্ঘ তিন বছর অতিক্রান্ত হয়ে শনিবার বিকেল সিনেমা অজানা তিমিরে রয়ে গেল। মুক্তির আলোয় ঝলমলিয়ে উঠল না। একজন শিল্পী তাঁর ভালোবাসা, আবেগ ও বিশ্বাসের শিল্প বয়ানে বাংলাদেশের মানুষকে বলতে পারলেন না—ঘৃণা নয়, হত্যা নয়, ভালোবাসা ও জীবনই মানবজীবনের অবিনাশী সত্য।
ইতিমধ্যে আমরা নির্মাতা-শিল্পী-সংস্কৃতিজনেরা এই ছবির মুক্তিসহ সব ধরনের সেন্সরশিপ বাতিল করে একটি প্রগতিশীল সার্টিফিকেশন নীতিমালা প্রণয়ন এবং চলচ্চিত্র, ওটিটিসহ সব মাধ্যমে গল্প বলার স্বাধীনতা বিষয়ে ছয় দফা দাবি নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছি।
ইতিমধ্যে আমরা নির্মাতা-শিল্পী-সংস্কৃতিজনেরা এই ছবির মুক্তিসহ সব ধরনের সেন্সরশিপ বাতিল করে একটি প্রগতিশীল সার্টিফিকেশন নীতিমালা প্রণয়ন এবং চলচ্চিত্র, ওটিটিসহ সব মাধ্যমে গল্প বলার স্বাধীনতা বিষয়ে ছয় দফা দাবি নিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদের আমন্ত্রণে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছি।
সবশেষে বলি, শিল্পের পিঠে সময়ের আঁচড় থাকতে হয়। এটা শিল্পীর দায়। শিল্পীরা এ কাজ করেন সেটি চলচ্চিত্র হোক কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমে। তাই এখানে রাখা যাবে না কোনো বাধা।
- নাসির উদ্দীন ইউসুফ নাট্যব্যক্তিত্ব ও নির্মাতা