প্রযুক্তির এ যুগে স্মার্টফোন, কম্পিউটার বা ইন্টারনেট ছাড়া দিন পার করা কঠিনই বটে। করোনাকালের পর ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীলতা অনেক বেড়েছে। বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে ইন্টারনেট। আর তাই আমাদের দৈনিক ইন্টারনেট ব্যবহারের একটি বড় অংশজুড়েই রয়েছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতন না হলে এসব সাইটে বড় ধরনের সাইবার হামলার কবলে পড়তে হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইটে নিরাপদে থাকার কৌশলগুলো জেনে নেওয়া যাক।
ফেসবুক ব্যবহার করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া এখন কঠিনই। ফেসবুকে অনেকেই নিয়মিত ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি প্রকাশ (পোস্ট) করেন। এতে পরিচিতদের পাশাপাশি অপরিচিতরাও ব্যক্তিগত তথ্য জেনে যান। সাইবার অপরাধীরা চাইলেই ছবি বা তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে সাইবার হামলা চালাতে পারে। ফেসবুকে নিরাপদ থাকতে নিচের বিষয়গুলো জানতে হবে।
বন্ধু তালিকার সবাই কি পরিচিত: ফেসবুকের বন্ধু তালিকায় যাঁরা আছেন, তাঁদের সবাইকে কি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন? একেবারেই অপরিচিত কেউ আছে কি না, সেটা যাচাই করা প্রয়োজন। নতুন বন্ধু বানানোর আগে অবশ্যই সেই ব্যক্তির প্রোফাইল দেখে বিভিন্ন তথ্য যাচাই করা উচিত। প্রোফাইলের ছবি এবং অন্যান্য তথ্য দেখে যদি নির্ভরযোগ্য মনে হয়, তবেই তাকে বন্ধু তালিকায় জায়গা দেওয়া উচিত।
প্রাইভেসি সেটিংস নির্ধারণ: ফেসবুক প্রোফাইল থেকে দেওয়া তথ্যগুলো কারা দেখতে পারবে, ফেসবুক সার্চ অপশনে নাম বা কোনো তথ্য দেখা যাবে কি না, কেউ বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাতে পারবে কি না, তা প্রাইভেসি সেটিংসের মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। পাশাপাশি ফেসবুকে পোস্ট করার আগে সেটি কারা দেখতে পারবে, তা–ও নির্বাচন করতে হবে। এতে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিরা আপনার তথ্য ও ছবি দেখতে পারবে না।
পাসওয়ার্ডে সচেতনতা: অ্যাকাউন্টে লগইন করার জন্য ফোন নম্বর ও ই–মেইল ঠিকানা এবং পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়। ই–মেইল ঠিকানা এবং ফোন নম্বর অন্যরা জানলেও সমস্যা নেই, তবে পাসওয়ার্ড অবশ্যই গোপন রাখতে হবে। কখনোই কোনো প্রয়োজন বা প্রলোভনে পড়ে কাউকে পাসওয়ার্ড জানানো যাবে না।
পাসওয়ার্ডে এমন কোনো শব্দ বা সংখ্যা ব্যবহার করা উচিত নয়, যেটা সহজেই অন্য কেউ অনুমান করতে পারবে। পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, নিজের মা–বাবা বা প্রিয়জনের নাম, জন্মতারিখ বাসার ঠিকানা বা এলাকার নাম মানুষ পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। আপনাকে যাঁরা চেনেন, তাঁদের পক্ষে এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা কঠিন নয়। হয়তো তাঁরা আগে থেকেই জানেন, তাই এমন তথ্য কখনোই পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
দুই স্তরের নিশ্চিতকরণ: টু স্টেপ বা দুই ধাপে লগইন পদ্ধতি বেছে নিয়ে আরও নিরাপদে ফেসবুক ব্যবহার করা যায়। প্রত্যেকেরই উচিত নিজের অ্যাকাউন্টে স্টেপ ভেরিফিকেশন চালু করা। ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করার চেষ্টা করা হলে আপনার মুঠোফোনে একটি সাংকেতিক এসএমএস আসবে এবং মোবাইলে থাকলে সেখানে নোটিফিকেশন দেখা যাবে। এসএমএস কোড অ্যাপ থেকে নিশ্চিত করা হলেই কেবল লগইন করা যাবে।
একই অ্যাকাউন্ট থেকে পেজ ম্যানেজ করা: ফেসবুক পেজ তৈরি করার সময় একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেই অ্যাকাউন্টে একাধিক মানুষ পেজ হালনাগাদের কাজ করেন অনেক সময়। এটি সম্পূর্ণ ভুল পদ্ধতি। কারণ, এ ক্ষেত্রে একাধিক মানুষ একটি অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করায় পাসওয়ার্ড ভাগাভাগি করতে হচ্ছে। আবার সব হালনাগাদ একই অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করার ফলে কে পোস্ট দিচ্ছেন, তা জানা যাচ্ছে না।
ফেসবুকে গেম বা কুইজ থেকে সাবধান: কে আপনাকে ভালোবাসে, ভবিষ্যতে আপনি কোন পেশায় যাবেন, আপনার পরবর্তী ভ্রমণের জায়গা কোনটি হবে ইত্যাদিসহ নানা ধরনের মজার কুইজ বা গেম ফেসবুকে দেখা যায়। এগুলো ব্যবহার না করাই শ্রেয়। এসব গেম খেলার সময় বলা হয়, আপনার ব্যক্তিগত প্রশ্নগুলোর ওপর ভিত্তি করে ফলাফল দেখানো হবে। আর তখনই আপনার প্রোফাইলের তথ্যগুলো সেই গেম বা কুইজ নির্মাতারা নিয়ে নেয়।
নিয়মিত চেকআপ: ফেসবুকের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের কোনগুলো কেন প্রয়োজন, তা ফেসবুকের একটি পেজ থেকে যাচাই করা ভালো। facebook.com/privacy/checkup হলো সেই পেজ। এই পেজ থেকে নিজের প্রোফাইলের নিরাপত্তার অবস্থা দেখা যায়।
ফেসবুকের পর ইনস্টাগ্রাম দেশে বেশি ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। ইনস্টাগ্রামের প্রোফাইলে বেশ কিছু প্রাইভেসি সেটিংস রয়েছে। ফেসবুকে আলাদাভাবে প্রতিটি পোস্টের জন্য প্রাইভেসি নির্ধারণ করা গেলেও ইনস্টাগ্রামে সেই সুযোগ নেই। তবে অ্যাকাউন্টটি প্রাইভেট হিসেবে করে রাখা যেতে পারে, যেখানে কেবল অনুসারী হিসেবে যুক্তরাই আপনার ছবি, ভিডিও দেখতে পারবে।
ইনস্টাগ্রামে মন্তব্যের সুবিধা বন্ধ রাখা: পোস্টে কোনো মন্তব্য করা হলে সেটি আলাদাভাবে মুছে ফেলার (ডিলিট) ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এমন যদি হয়, একটি পোস্টে কোনো মন্তব্যই চাচ্ছেন না, সে ক্ষেত্রে পোস্ট করার আগে অ্যাডভান্স সেটিংস থেকে মন্তব্য বা কমেন্টস বন্ধ করে রাখতে পারেন।
ইনস্টাগ্রামে কী ধরনের পোস্ট দেওয়া যাবে, সে বিষয়ে নীতিমালা রয়েছে। আপত্তিকর বা অপমানজনক কোনো পোস্ট দেখলে রিপোর্ট করার ব্যবস্থা রয়েছে। সত্য প্রমাণিত হলে ইনস্টাগ্রাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই পোস্টটি সরিয়ে ফেলবে। এর ওয়েব ঠিকানা
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম যোগাযোগের জন্য মেসেঞ্জার ব্যবহার করতে দেয়। মেসেঞ্জারের জন্য আলাদা নীতিমালা না থাকলেও ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের নীতিমালা রয়েছে। মেসেঞ্জার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফেসবুকের চেয়ে বাড়তি কিছু সতর্কতা প্রয়োজন।
বিভিন্ন আকর্ষণীয় উপহার বা প্রতিযোগিতায় বিজয়ের সুযোগ এসেছে, এমন প্রলোভন দেখিয়ে মেসেঞ্জারে তথ্য নেওয়া হয়। ফলে সাবধান।
ফেসবুক ব্যবহারের ন্যূনতম বয়স ১৩ বছর। এর চেয়ে কম বয়সী কারও আইনত ব্যবহারের অনুমতি নেই। আপনি চাইলে আপনার সন্তানের জন্য সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মেসেঞ্জার কিডস ব্যবহার করতে পারেন। এই অ্যাপে আলাদাভাবে নিবন্ধন করার সুযোগ নেই, বরং অভিভাবকেরা তাঁর সন্তানের জন্য অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় করতে পারেন। মেসেঞ্জার কিডস অ্যাপ থেকে অপর মেসেঞ্জার কিডস বা সাধারণ অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। মেসেঞ্জার অ্যাপস থেকে কী কী লিংক শেয়ার করা হচ্ছে এবং কার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, তার একটি প্রতিবেদন অভিভাবকদের প্রতি সপ্তাহে পাঠানো হয়।